টিনেজার স্কিন কেয়ার রুটিন
টিনেজ এ সৌন্দর্য :
টিনেজ হলো সৌন্দর্য বিকাশের সবচেয়ে ভালো সময়। এসময় এই সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয়। এটি এমন একটি সময়, যখন আপনার সৌন্দর্য বিকাশে যেকোনো কাজ আপনি করতে পারেন। আপনি অনেক কিছু শিখে থাকেন এবং সৌন্দর্য বিকাশে তা আপনি প্রয়োগ করতে চান। টিনএজে ব্যক্তিগত যেকোনো পছন্দ-অপছন্দ সবকিছুই বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। টিনএজদের ত্বকের যত্ন নেয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ সৌন্দর্যের মূল অংশ ত্বক। ত্বক যদি ভাল থাকে সৌন্দর্য ও সবচেয়ে ভালো করে প্রস্ফুটিত হয়। টিনএজ বা কিশোর বয়সে ব্রন এর সমস্যা হয়ে থাকে যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা চলে যায়।
সবকিছু বিবেচনা করে ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে ত্বকের যত্ন নেয়ার কোন বিকল্প নেই। স্কিন Glow করতে হলে অবশ্যই ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে এবং উজ্জলতা বাড়াতে হবে। স্কিন কেয়ার এর জন্য টিপস বয়স ভেদে বিভিন্ন হয়। কারণ বিভিন্ন বয়সে ত্বকের বিভিন্ন রকম পরিবর্তন আসে। আমরা টিনএজারদের স্কিন কেয়ার রুটিন নিয়ে কথা বলবো যেন এ বয়সের সবাই তাদের স্কিনকে ভালো রাখতে পারে।
টিনএজারদের ত্বকের যত্নে করণীয়:
সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করা:
মুখের ত্বক ভালো করার জন্য প্রথম কথা হল মুখমন্ডল সঠিক ভাবে পরিষ্কার করতে হবে। বাহির থেকে বাড়িতে প্রবেশ করার পর প্রথম কাজ হলো ভালোভাবে মুখমন্ডল পরিষ্কার করা। মুখমন্ডল ভালোভাবে পরিষ্কার করা বলতে আমরা বোঝাচ্ছি যে মেকআপ তুলতে হবে, সানস্ক্রিন যদি থাকে তা পরিষ্কার করতে হবে, এবং ধুলোবালি মুখে লেগে থাকলে তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। মুখ পরিষ্কার করার জন্য একটি ভালো ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন তারপর ক্লিনজার মুখে নিয়ে আলতো করে ঘষতে থাকুন। এর কিছুক্ষণ পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখমণ্ডল ভালো করে পরিষ্কার করে ফেলুন। টাওয়েল দিয়ে মুখ মোছার সময় লক্ষ্য রাখবেন যেন অতিরিক্ত ঘষা না হয়।
এক্সফলিয়েট ব্যবহার করা:
আপনার ত্বকের যত মৃত কোষ আছে, এবং যে ব্ল্যাকহেডস গুলো রয়েছে তা অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে। এর জন্য এক্সফলিশন খুবই প্রয়োজন। মসৃণ ত্বক পাওয়ার জন্য সপ্তাহে এটা আপনাকে বেশ কয়েকবার করতে হবে। এক্সফলিয়েশন সপ্তাহে অন্তত 1 থেকে 2 বার করা ভালো। আপনি এটা বাড়িতে করতে পারেন অথবা পার্লারে গিয়ে করতে পারেন। আজকাল এ ধরনের এক্সফলিয়েশন পার্লারে অত্যন্ত কমন।
স্কিন এ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে:
আপনার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর তা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এজন্য অবশ্যই আপনার ত্বককে আদ্র রাখতে হবে কারণ আদ্রতার অভাবেই ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বক যাতে তৈলাক্ত না হয় সেজন্য অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে, হোক শুষ্ক ত্বক অথবা হোক তা অয়েলি, এই দুই ধরণের ত্বকেই অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। সুন্দর ত্বকের জন্য আপনার ত্বক সব সময় হাইড্রেটেড রাখুন। ত্বকের বলিরেখা দূর করতে এবং ত্বকের সুখ রেখাগুলো দূর করতে স্কিন হাইড্রেটেড রাখুন।
মেকআপ নিয়ে ঘুমোতে যাবেন না:
আপনি হয়তো বাইরে থেকে এসেছেন অথবা কোন পার্টি থেকে এসেছেন এবং খুব ক্লান্ত। যদিও আপনি খুব ক্লান্ত, তবুও আপনার মেকআপ পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। মেকআপ নিয়ে ঘুমোতে গেলে তা আপনার স্কিন কে ডেমেজ করে দিতে পারে। এটা আপনার স্কিনের ছিদ্র গুলোকে আটকে দিতে পারে। সব সময় চেষ্টা করুন ক্লিনজার দিয়ে আপনার মেকআপ কে তুলে ফেলতে। তাই আপনি যতই ক্লান্তি অনুভব করেন না কেন, অবশ্যই মেকআপ তুলে ফেলুন ঘুমোতে যাওয়ার আগে। স্কিন ভালো রাখতে একটি ভালো ব্র্যান্ডের মেকআপ রিমুভার অথবা ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
বাইরে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সানস্ক্রিন:
বাইরে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সানস্ক্রিন নিয়ে যাবেন যদিও বাইরে রোদ নাও থাকে। রোদ থাকুক, বা না থাকুক উভয় ক্ষেত্রেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভালো। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই আপনার ত্বকের ড্যামেজ প্রতিহত করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। টিনএজারদের সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে কারণ এ বয়সে ত্বক স্বভাবতই অনেক সেনসিটিভ থাকে। কড়া রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন এবং বাইরে গেলে সানস্ক্রিন নিয়ে প্রটেক্টিভ থাকুন।
এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন:
এন্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রিরেডিকেল থেকে আমাদের রক্ষা করে থাকে। এন্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রিরেডিকেল তৈরি হতে দেয় না, এবং আমাদের ত্বক অনেক ভাবেই রক্ষা করে থাকে যেমন - বার্ধক্য রোধ করে, ত্বকে কালো দাগ দূর করে এবং স্কিন কে দূষণমুক্ত রাখে। আমরা খাবারের মাধ্যমে এন্টিঅক্সিডেন্ট পেতে পারি যেমন ব্রকলি, স্পিনাস ইত্যাদি। টিনএজারদের ত্বক ভালো রাখতে অবশ্যই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার খেতে হবে। অনেক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর মধ্যেও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যখন কোন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ক্রয় করেন, তখন তার লেভেলে দেখে নিন যে এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ কিনা।
স্কিন টোনার ব্যবহার করুন:
স্কিন ভালো রাখতে স্কিন টোনার ব্যবহার করুন, কারণ এটা অতিরিক্ত ডার্ট এবং অয়েল দূর করে। যেহেতু টিনএজারদের ব্রণ এর একটা সমস্যা থাকে তাই স্কিন টোনার ব্যবহার করা ভালো। কার্বন স্কিন টোনার ব্যবহারের ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্কিন টোনার ব্যবহার করার পর অবশ্যই আপনার স্কিন বাতাসে শুকাতে হবে, এরপর আপনি এতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
চোখের চারপাশের অংশ সুরক্ষিত রাখুন:
আপনার মুখের সৌন্দর্য নির্ভর করে আপনার চোখের উপর। অনেক সময় চোখের চারপাশে কালো দাগ পড়ে যায় যা, আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যাহত হয়। আপনার চোখের চারপাশের কালো দাগ দূর করার মাধ্যমে আপনার চেহারার উজ্জলতা ফেরাতে পারেন। অনেক সময় অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত রাত জাগা থেকে বিরত থাকুন।
মেকআপ শেয়ার করবেন না:
টিনএজারদের অনেকেই তাদের মেকআপ তার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে থাকেন। আপনি কি আপনার বন্ধুর জীবাণু শেয়ার করতে চান? এর উত্তর এ আপনি বলবেন অবশ্যই না। বিশেষত চোখের পণ্য এবং লিপ বা ঠোঁটের পণ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি যদি অন্যের কোন বিউটি পণ্য ব্যবহার করেন এর মাধ্যমে আপনার অনেক স্কিন ডিজিজ হতে পারে। তাই মেকআপ শেয়ার থেকে বিরত থাকুন।
প্রচুর পানি পান করুন:
সুস্থ ত্বকের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনি কি পর্যাপ্ত পানি পান করছেন? অনেক সময় শীতকালে আমরা স্বভাবতই পানি কম খাই। তাই লক্ষ্য রাখুন যেন আপনি ডিহাইড্রেটেড না হয়ে যান। সুস্থ ত্বকের জন্য এবং নিজে সুস্থ থাকার জন্য হাইড্রেটেড থাকুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি হেলদি ফুড এবং সাউন্ড স্লিপ অত্যন্ত জরুরী। টিনএজারদের সুস্থ ত্বকের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
অয়েল কন্ট্রোল করুন:
অনেক টিনএজারদের স্কিন তৈলাক্ত এবং তা নিয়ে তারা বেশিরভাগ সময়ই চিন্তিত থাকে। কারণ তৈলাক্ত ত্বকে ধুলো-ময়লা সহজে আটকে যায় এবং অনেক সময় স্কিন ইরিটেশন হয়। এজন্য স্কিনের অয়েল কন্ট্রোল করা অত্যন্ত জরুরি। টিনএজাররা অয়েল কন্ট্রোল করার জন্য স্যালিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আরও অনেক অয়েল ফ্রি প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। একটি ভালো ব্যান্ডের যে কোনো oil-free প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন।
টিনএজারদের স্কিন কেয়ার রুটিন এ এই টিপসগুলো মেনে চলতে পারেন। এ সময়ে সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নিলে, বয়স যখন 30 বা 30 এর বেশি হলেও আপনার ত্বক থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। টিনেজ সময় উপভোগ করুন এবং পরবর্তী জীবনে আপনার স্কিন ভালো রাখুন।
Post a Comment