-->

কিভাবে তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ ও তেলতেলে ভাব দূর করা যায়

কিভাবে তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ ও ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করা যায়? আপনি নিশ্চয় তৈলাক্ত ত্বক হতে মুক্তি পেতে চান কারণ এটি ব্রণ সহ ত্বকের অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে।

তৈলাক্ত ত্বক অনেক কারণেই হতে পারে, তার মধ্যে হরমোনের পরিবর্তন অন্যতম। আপনি আপনার হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না কিন্তু আপনার ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেয়া এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যম আপনার ত্বকের তৈলাক্ততা কমাতে পারেন। আর এটি করলে আপনি পাবেন একটি সুস্থ ত্বক। 

কিভাবে তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ ও এর তেলতেলে ভাব দূর করা যায় তা নিয়ে আমরা এই প্রবন্ধে আলোচনা করব।

ত্বক কিভাবে তৈলাক্ত হয়? 

ত্বক অনেক কারণেই তৈলাক্ত হতে পারে, তার মধ্যে প্রধান দুটি কারণ রয়েছে। 

  • একটি হলো স্বাস্থ্যগত কারণে 
  • আরেকটি হলো পরিবেশগত কারণ। 

স্বাস্থ্যগত কারণের মধ্যে রয়েছে হরমোনের পরিবর্তন এবং পরিবেশগত কারণের মধ্যে রয়েছে হিউমিডিটি বা আদ্রতা।

ত্বকের তেল তৈরি হয় সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে যা আপনার টক এ রয়েছে। মাথার খুলি, মুখমন্ডল এবং শরীরের উপরিভাগে সাধারণত সবচেয়ে বেশি তৈলাক্ততা সৃষ্টি হয়। সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকেই সিবাম তৈরি হয়। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুনাগুন, প্রদাহ এবং রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করা সহ সিবাম এর অনেক উপকারিতা আছে, কিন্তু অতিরিক্ত সিবাম  নিঃসরণ আপনার ত্বকে ব্রণ সহ অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত সিবাম নিঃসরণ এর ফলেই আমাদের ত্বক তৈলাক্ত হয়।


কিভাবে তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ ও তেলতেলে ভাব দূর করা যায়


তৈলাক্ত ত্বকের কারণ:

  • ত্বকের তৈলাক্ততা বংশগত কারণে হতে পারে। সাধারণত যখন ত্বকের ছিদ্র গুলি বড় হয়ে যায় তখন তার থেকে বেশি পরিমাণ অয়েল নিঃসৃত হয়। ত্বকের এই ছিদ্রগুলো পরিমাণ বা আকৃতি পারিবারিক বা বংশগত কারণে বিভিন্ন হতে পারে।
  • সিবাম উৎপাদনের সাথে গ্রোথ হরমোনের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং ব্রণ সৃষ্টির জন্য এটি অনেকাংশেই দায়ী।
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা মেন্টাল স্ট্রেস আপনার ত্বককে তৈলাক্ত করতে পারে।
  • চিনি সমৃদ্ধ খাদ্য দ্রব্য এবং কার্বোহাইড্রেট এর সিবাম উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদন ত্বক তৈলাক্ত করতে পারে।
  • হিউমিডিটি বা আদ্রতা ঘাম সৃষ্টি এবং তেল উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত। গ্রীষ্মকালীন সময়ে ত্বকের তৈলাক্ততার হার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিরিক্ত হিউমিডিটি একজিমা সৃষ্টি করতে পারে।
  • এছাড়াও বিভিন্ন হরমোনের ইমব্যালেন্স বা তারতম্যের কারণে ও ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে।
  • সঠিকভাবে এবং নিয়মিতভাবে ত্বক পরিষ্কার না করলে ত্বক এ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় এবং ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ।
  • বিভিন্ন অয়েল সমৃদ্ধ কসমেটিকস যেমন সানস্ক্রিন, মেকআপ, এবং মশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে ও ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে।

 

ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে হলে:

  • মুখমণ্ডলসহ আপনার ত্বক সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  • ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এমন দ্রব্য ব্যবহার করা হতে বিরত থাকতে হবে।
  • ক্রিম, কসমেটিকস সহ ত্বকে ব্যবহার্য পণ্য ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
  • প্রচুর পানি পান করতে হবে।
  • অধিক রাত্রিযাপন পরিহার করতে হবে।

 

কিভাবে তেলতেলে ভাব দূর করা যায়:

দিনে দুইবার ত্বক পরিষ্কার করুন:

সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই আপনার মুখমন্ডল ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। গরমের দিনে ব্যায়াম করার পরে ত্বক অতিরিক্ত পরিষ্কার করতে হবে। যেহেতু ত্বকের নিচেই তৈলগ্রন্থি রয়েছে তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে এই তৈলাক্ততা দূর করা। সঠিকভাবে এবং নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের তৈলাক্ততা দূর হয়।


মুখমন্ডলের তৈলাক্ততা দূর করতে ফেনা যুক্ত সাবান অথবা ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো ব্যবহারে আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর হবে। মার্কেটে অনেক ফেস ক্লিনজার পাওয়া যায় যা মুখমন্ডলের তৈলাক্ততা দূর করতে ব্যবহৃত হয়। অনেক ফেস ক্লিনজার এ ক্ষতিকর কেমিক্যাল করেছে তাই এগুলো ব্যবহারে অবশ্যই সচেতন হবেন। তৈলাক্ততা দূর হলে মুখমন্ডলে আপনি একটি প্রফুল্ল ভাব অনুভব করবেন তাই অন্তত দিনে দুইবার খুব ভালো করে ত্বক পরিষ্কার করুন। 


ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করলে এবং সঠিকভাবে বিভিন্ন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেই যে আপনার ত্বক থেকে তৈলাক্ততা একেবারে দূর হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। কিন্তু এগুলো করলে আপনার মুখমন্ডলের তৈলাক্ততা কমবে এবং আস্তে আস্তে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে।


মুখমন্ডল পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই তা আলতোভাবে করবেন। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত মুখমন্ডল ধৌত করুন আপনার ত্বকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ধৌতকরণ আপনার মুখমন্ডলকে খসখসে করতে পারে।


ত্বকের আদ্রতা ঠিক রাখুন:

আপনার ত্বকের আদ্রতা অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে। এটা ঠিক যে, অয়েলি স্কিন বা তৈলাক্ত ত্বক সাধারণত লুব্রিকেটেড হয় কিন্তু এটার মাধ্যমে ত্বকের সুস্থতার জন্য যতটুকু আদ্রতা প্রয়োজন তা নিশ্চিত হয় না।


যখন আপনার ত্বক ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায় তখন ত্বকের বিভিন্ন স্তরে শোষিত হয় না। তার মানে হল তখন আপনার ত্বক ইলাস্টিসিটি হারায়। এ অবস্থায় আপনার ত্বক লাল হতে পারে, প্রদাহ হতে পারে এবং এতে রিংকেলস দেখা দিতে পারে। ত্বকের তৈলাক্ততা একটা প্রাকৃতিক বেরিয়ার হিসেবে কাজ করে যা ময়েশ্চার বা ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে। ত্বকের এই তৈলাক্ত ভাব দূর হলে এটি শুষ্ক হয়ে যেতে পারে তাই মুখমন্ডল এর আদ্রতা ধরে রাখা জরুরি। এখানে বলে রাখা ভালো যে, ত্বকের তৈলাক্ততা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে, কিন্তু যখন ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয় তা ব্রণ সহ বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করে।


কিভাবে তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করা যায়?

তৈলাক্ত ত্বকের ময়েশ্চারাইজার এর তিনটি গুণ থাকতেই হবে:

১. আদ্রতাকে সিল বা লক  করবে - যে পণ্যগুলো এ কাজটি করে তা occlusive নামে পরিচিত। এটা আপনার ত্বকে একটা বাধা বা বেরিয়ার তৈরি করে যা ত্বককে শুষ্ক হতে দেয় না।

২. ত্বকের ভেতরের স্তর থেকে পানি উপরিভাগে নিয়ে আসবে - যে কাজটি বিভিন্ন লোশন করে থাকে। এগুলো অনেকটা চুম্বকের মত যা ত্বকের ভেতরের স্তর থেকে পানিকে বাইরের স্তর নিয়ে আসে।

৩. ত্বককে মসৃণ এবং নরম করবে - আপনার মশ্চারাইজার কে অবশ্যই ইমোলিয়েন্ট হতে হবে যা আপনার ত্বককে মসৃণ এবং নরম করবে।

তাই আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করতে যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন তাতে অবশ্যই উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতে হবে। 


তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দুর করতে অয়েল-ফ্রি পন্য ব্যবহার করুন:

অবশ্যই আপনি আপনার তৈলাক্ত ত্বককে আরও অতিরিক্ত তৈলাক্ত করতে চাইবেন না। আপনার ত্বকের জন্য স্কিন কেয়ার পণ্য কেনার আগে তা অয়েল-ফ্রি কিনা দেখে নিন। পণ্যটি ক্রয় করার আগে তার লেভেল এ কি কি উপাদান আছে তা দেখুন। মশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন এবং মেকআপ ক্রয় করার আগে এই কাজটি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পণ্য গুলো অয়েল সমৃদ্ধ হলে, তা আপনার ত্বককে আরও তৈলাক্ত করতে পারে। এছাড়া এর বিকল্প হিসেবে আপনি water-based সানস্ক্রিন, মশ্চারাইজিং জেল, ফাউন্ডেশন এবং মেকআপ ব্যবহার করতে পারেন।


আপনি যদি ব্রণের জন্য এই মুহূর্তে বেশি তৈলাক্ত কোন ঔষধ ব্যবহার করেন তাহলে এর বিকল্প হিসেবে জেল ব্যবহার করতে পারেন। কোন ছেলেটি জেলটি আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে তা জানতে আপনার ডার্মাটোলজিস্ট বা স্কিন স্পেশালিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করুন। 

তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ ও তেলতেলে ভাব দূর করতে হলে অবশ্যই আপনাকে প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নিতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। নিয়মিতভাবে দিনে দুইবার মুখমন্ডল ভালোভাবে পরিষ্কার করা, এবং সঠিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করায় এর কার্যকরী সমাধান। এগুলো করার পরেও যদি এর কার্যকর সমাধান না হয় তাহলে অবশ্যই আপনি একজন ডার্মাটোলজিস্ট বা স্কিন স্পেশালিস্ট এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, এই টিপসগুলো অনুসরণ করলেও কার্যকর ফলাফল পেতে সময় প্রয়োজন।  ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে রাতারাতি সঠিক ফলাফল পাওয়ার আশা করা অনুচিত। তাই ধৈর্য ধরে নিয়মিত ভাবে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে হবে।