অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল হলো যে কারো সৌন্দর্য বিকাশের একটি বড় অংশ। এটা আমাদের মাথার প্রটেক্টিভ হিসেবে কাজ করে এবং মাথা কে সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি হতেও রক্ষা করে। কিন্তু কারো কারো অত্যাধিক পরিমাণে চুল পড়ে যায়, বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে। অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। এখানে আমরা কিছু টিপস আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব, যেন আপনারা চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন, এবং সেইসঙ্গে আমরা আরো আলোচনা করবো চুল ঘন করার উপায়।
চুল পড়ার মাধ্যমে আমরা মানসিক ভাবেও অস্বস্তিতে থাকি। হোক ছেলে বা মেয়ে যে কারো জন্যই চুল পড়ে যাওয়া একটি অস্বস্তিকর ব্যাপার এবং চিন্তার তো বটেই। অতিরিক্ত চুল পড়ার ফলে চুল এর ঘনত্ব কমে যায় এবং ক্রমেই তা পাতলা হতে থাকে। চুলের কিছু ড্যামেজ আছে যা ইরেভারসিবল এটা কে ফেরানো যায় না। কিন্তু ভালো খবর হলো যে চুলের সঠিক যত্ন নিলে এবং নিয়ম মেনে চললে চুলপড়া অনেকটাই আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন।
চুল পড়ে যাওয়া বা পাতলা হয় কেন?
চুল পড়া প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে কেন আপনার চুল পড়ে যাচ্ছে। আপনি যদি কারণ জানতে পারেন তা হলে এর প্রতিকার ও করতে পারবেন। আপনি প্রতিনিয়তই আপনার চুল হারাচ্ছেন এর কারণ হলো:
অত্যাধিক মানসিক চাপ:
দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধিক মানসিক চাপে থাকলে আপনি আপনার চুল হারাতে পারেন। সাধারণত অত্যাধিক চাপে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার কিছু চুল ঝরে পড়তে পারে। এটা যদি কারণ হয় তাহলে আপনি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেলেই পুনরায় আপনার চুল গজাবে।
আয়রন এর অভাব:
আয়রনের অভাব ঘটলে আমাদের শরীর পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন করতে পারে না এবং এর ফলে আমাদের কোষগুলোতে সঠিকভাবে অক্সিজেন পৌঁছাতে ব্যাহত হয়। চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার পেছনে লৌহের অভাব এর ভূমিকা রয়েছে। গর্ভবতী মহিলাদের রক্তস্বল্পতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অ্যালোপেসিয়া:
অ্যালোপেসিয়া হলে চুল পাতলা হয়ে যায় এবং এর পেছনে ইমিউন সিস্টেম দায়ী। এতে হেয়ার ফলিকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বয়সের কারণে চুল পড়ে যাওয়া:
বয়সের সাথে চুলের একটি বড় সম্পর্ক রয়েছে কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলের বৃদ্ধি ও আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক মেয়েরাই চুল হারাতে থাকে। এর পাশাপাশি বয়স বেশি হলে চুলের রঙ ও আস্তে আস্তে উজ্জলতা হারাতে থাকে। মেয়েদের চুল হারানোর জন্য এটা একটা প্রাকৃতিক কারণ।
প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব হলে:
প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে আপনার চুল ঝরে পড়তে পারে যদি আপনার বিভিন্ন ভিটামিন সহ অন্যান্য পুষ্টির অভাব ঘটে। আপনার শরীরের যদি প্রোটিনের অভাবে ঘটে সেক্ষেত্রেও চুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রোটিন, ভিটামিন এগুলো চুলের জন্য আবশ্যক। আমাদের দেহের যেমন পুষ্টি দরকার তেমনি, সুস্থ চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির প্রয়োজন।
প্রেগনেন্সি পরবর্তী সময়ে চুল ঝরে পড়া:
সন্তান জন্মের কয়েক মাস পর কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে চুল ঝরে পড়তে পারে। এটা হয়ে থাকে ইস্ট্রোজেন লেভেলের তারতম্যের কারণে। এটার জন্য সাধারণত কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের কিছু পরে পুনরায় আবার চুলের ঘনত্ব ফিরে আসে।
চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায়:
আমরা কিছু নিয়ম মেনে চুলপড়া প্রতিকার করতে পারি।
Scalp এ মেসেজ করা:
অয়েল মেসেজ হলো চুল পড়া প্রতিরোধের একটি ভালো উপায় এবং বাড়িতেই আপনি তা করতে পারবেন। এটি করা যেমন আপনার জন্য সুবিধাজনক, তেমনি এটা সাশ্রয়ী। কারন এটার জন্য আপনাকে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে না। এটা যে কেউ করে দিতে পারে আপনাকে। ওয়েল মেসেজ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং এটা বেশ নিরাপদ। হাতের তালুতে কিছুটা তেল নিন, এবং আপনার scalp এ তা আলতো করে মেসেজ করুন। তেল ম্যাসেজ করার পূর্বে অবশ্যই আপনার চুল ধুয়ে নিন। নিয়মিত ম্যাসেজ করলে চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং চুল পুনরায় গজাতে সাহায্য করে। মেয়েরা সহজেই এই টিপসটি কাজে লাগাতে পারেন এবং তা বাড়িতে বসেই করতে পারেন।
ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড:
প্রিম্যাচিউর হেয়ার ফল এর অন্যতম কারণ হলো প্রদাহ ইনফ্লামেশন। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ইনফ্লামেশন কমায় এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে। ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড একটি এসেন্সিয়াল ফ্যাটি এসিড। ওমেগা ৩ ফ্যাটি আসিড এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড আপনার চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। এটা আপনার চুলের জন্য তো বটেই, পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। এ ধরনের এসেন্সিয়াল ফ্যাটি এসিড সামুদ্রিক মাছ যেমন salmon, Cod fish প্রভৃতির মধ্যে পাওয়া যায়।
চুলে অতিরিক্ত তাপ না দেওয়া বা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট না করা:
চুলে অতিরিক্ত হিট দিয়ে স্টাইল করা বা প্রয়োজন না হলে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এর ফলে আপনার চুল ঝরে পড়তে পারে এবং চুল পাতলা হতে পারে। কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট এর বদলে আপনি প্রাকৃতিক কোন উপাদান দিয়ে চুলের যত্ন নিতে পারেন। প্রাকৃতিক উপাদানে যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম তেমনি তা চুল পড়া প্রতিরোধে কার্যকর।
চুল অতিরিক্ত ধোয়া থেকে বিরত থাকুন:
আপনার চুলের ন্যাচারাল অয়েল বা প্রাকৃতিক তেল হারিয়ে যেতে পারে যদি আপনি অত্যাধিক পরিমাণে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে আমাদের চুলে প্রাকৃতিকভাবেই তেল থাকে, সেটাকে ন্যাচারাল অয়েল বলে। শুষ্ক চুল এর আগা সহজে ফেটে যায়, এবং সহজে চুল ঝরে পড়তে পারে।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ:
আপনার চুল যেন প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় সে জন্য বিভিন্ন পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল, শাকসবজি, প্রোটিন, এগুলো খাওয়া উচিত। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার ফলে অ্যালোপেসিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমে এবং পাশাপাশি চুল ঝরে পড়া ও প্রতিহত করবে। আপনার খাবারে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন।
চুল ঘন করার শ্যাম্পু:
চুল ঘন করার অনেক শ্যাম্পু পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে এসেনশিয়াল অয়েল রয়েছে। এগুলো চুলের পুষ্টি বাড়ায় এবং চুলকে নারিশ করে। এ ধরনের প্রোডাক্টের মধ্যে এমাইনো এসিড রয়েছে যা আপনার চুলকে মজবুত করতে সাহায্য করবে। এ সকল প্রোডাক্ট ক্রয় করার পূর্বে লেভেলে কার্যকরী উপাদান গুলো দেখে নিন।
স্ট্রেস মুক্ত বা মানসিক চাপ বিহীন জীবন যাপন:
যেহেতু অতিরিক্ত মানসিক চাপ আপনার চুলকে ঝরে পড়তে সাহায্য করে, তাই চুল পড়া প্রতিরোধে মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন। মানসিক চাপ মুক্ত সুন্দর জীবন যাপন করুন এবং চুল ঝরে পড়া প্রতিরোধ করুন। মেয়েদের চুল ঝরে পড়ার এটি অন্যতম কারণ, কেননা তারা প্রায়ই মানসিক চাপে ভোগেন।
হেয়ারস্টাইলে সচেতন থাকুন:
চুল খুব জোরে টাইট করে বেঁধে রাখা উচিত নয় এটা আপনার চুল ড্যামেজ করে দিতে পারে। বরং আপনি যেভাবে আরাম বোধ করেন চুলকে সেভাবেই বেঁধে রাখুন।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়া বন্ধ ও চুল ঘন করার উপায়:
অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন:
অ্যালোভেরার মধ্যে চুল গজানোর গুনাগুন রয়েছে, এবং এটা আপনার চুলকে স্মুথ করতে সহায়তা করে, পাশাপাশি এটি খুশকিও দূর করতে পারে। এটা আপনার হেয়ার ফলিকলের গড়া পরিষ্কার রাখে এবং অতিরিক্ত তেল উৎপাদন দূর করে। অ্যালোভেরা ব্যবহার চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক সমাধান। তাই চুল পড়া রোধে এবং চুল পাতলা হওয়া প্রতিরোধ করতে এলোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।
লেবুর রস ব্যবহার:
লেবুর রস সত্যি সত্যি ই আপনার চুলের গুনাগুন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। লেবুর রস আপনার scalp এ প্রয়োগ করে কিছুক্ষণ রাখুন এবং কিছু সময় পর তার শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মেয়েদের চুল পড়ার যে কারণ গুলো রয়েছে সেগুলো চাইলেই, মেয়েরা তা এভোয়েড করতে পারেন। চুল একবার ঝরে পড়লে পুনরায় তা গজাতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। রাতারাতি অবশ্যই তা সম্ভব নয়। অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করতে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো চুলের নিয়মিত যত্ন নেয়া এবং চুল যে কারণে পড়ে যাচ্ছে সেগুলো অ্যাভয়েড করা। এছাড়াও এ সংক্রান্ত কোন সমস্যা হলে একজন ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। ডার্মাটোলজিস্ট আপনাকে সঠিক সমাধান দিবেন যদি কোন মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন হয়। আশাকরি অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় আপনার জন্য বেনেফিশিয়াল হবে।
Post a Comment