প্রতিদিন চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয়
প্রতিদিন যত্ন করে ও স্বাস্থ্যকর চুল পাচ্ছেন না? তাহলে এখন সময় হয়েছে স্টাইল পরিবর্তন এর। প্রতিদিনের চুলের যত্নে কি করবেন তার জন্য এখনই রুটিন বদলে ফেলুন। আপনার স্কিনের মত চুলের সঠিক যত্নের প্রয়োজন। আপনার চুলের ধরনের উপর ভিত্তি করে, প্রতিদিনের রুটিন সাজিয়ে ফেলুন, আর চুলকে করে তুলুন আরো স্বাস্থ্যকর এবং প্রাণবন্ত।
তবে এর জন্য অবশ্যই আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে। প্রতিদিনের চুলের যত্নে কি করবেন তা এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব।
আপনি যদি সঠিক হেয়ার কেয়ার রুটিন মেনে চলেন তাহলে আপনি পেতে পারেন এক্সট্রাঅরডিনারি হেয়ার লুক। অপরদিকে চুলের সঠিক যত্নের অভাবে আপনার চুল হতে পারে ড্যামেজ ও রুক্ষ।
চুলের ধরন:
সাধারণত চার ধরনের চুল দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো হলো পেঁচানো/কোঁকড়ানো বা কারলি হেয়ার, স্ট্রাইট বা সোজা চুল, wavy বা ঢেউ যুক্ত এবং kinky.
চুলের ধরন অনুযায়ী চুলের যত্নে করণীয়:
স্ট্রাইট বা সোজা চুল:
আসলে সোজা চুলের যত্ন নেয়া একটু সহজ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি এর সঠিক যত্ন নিবেন না। আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমাদের চুলে একটি ন্যাচারাল অয়েল বা প্রাকৃতিক তেল থাকে। সোজা চুলে এই ন্যাচারাল অয়েল গোড়া থেকে নিচ পর্যন্ত আসতে পারে সহজে।
কিভাবে সোজা চুল ওয়াশ করবেন: সোজা চুল গুলো সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, এবং তৈলাক্ত চুলে সাধারণতঃ সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। দুই থেকে তিন দিন পর পর সঠিক শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুল সতেজ রাখা প্রয়োজন এবং নারিশ করার জন্য একটি কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। Scalp কন্ডিশনার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং কন্ডিশনার চুলের গোড়ার দিক থেকে শুরু করে নিচের দিক পর্যন্ত ব্যবহার করুন।
Wavy বা ঢেউ যুক্ত চুল:
আপনি কিভাবে এই ধরনের চুলের যত্ন নিচ্ছেন তার উপরে নির্ভর করবে এটা স্টাইল করা সহজ হবে নাকি কঠিন হয়ে পড়বে। যে সকল চুল কারলি বা পেঁচানো ও নয় আবার সোজাও নয়, এ ধরনের চুলের একটু স্পেশাল কেয়ার বা যত্ন নিতে হয়। ঢেউ যুক্ত চুলের স্কাল্পে গ্রেজি বা আঠালো এবং চুলের শেষভাগে ড্রাই হতে পারে। এ ধরনের চুল পরিষ্কার করতে এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে তিন থেকে চারদিন পর পর ধুয়ে ফেলুন। ধোয়ার পর মাইক্রো ফাইবার তোয়ালে দিয়ে চুল গুলো ভালো করে মুছে ফেলুন।
প্রতিদিনের চুলের যত্নে এ ধরনের চুলে অলিভ অয়েল, অথবা নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন এবং অবশ্যই তা করবেন চুল ধুয়ে ফেলার এক ঘণ্টা আগে। অথবা চুলের তেল ম্যাসেজ করে সারারাত রাখতে পারেন। চুল ধোয়ার পূর্বে এবং পরে চুলের প্রোটিন যাতে লস না হয় সেজন্য নারকেল তেল সাহায্য করে। এছাড়াও অলিভ অয়েল চুলের বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করা যায়।
সূর্যতাপ এবং বাতাস ঢেউ ওয়ালা চুলের বিশেষ ক্ষতি করতে পারে। এ ধরনের চুল সুস্থ এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে জোজোবা অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। জোজোবা অয়েল চুলের শেষভাগে ব্যবহার করে সারারাত রাখতে পারেন তা আপনার চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
ঢেউ যুক্ত চুলের স্টাইল: ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে এ ধরনের চুল বিনুনী বা বেনি করে রাখা ভালো। চুল বিনুনী করে রাখলে আপনার চুল গুলো আরো বেশি সোজা থাকবে এবং চুল গুলো একত্রে সাজানো থাকবে। চুল আঁচড়ে রাখা খুবই জরুরি এ ধরনের চুল স্টাইল করার জন্য। ঢেউ ওআলা চুল, ভালো রাখার জন্য সুন্দর করে গুছিয়ে ও পরিপাটি করে রাখতে হবে।
Kinky হেয়ার:
Kinky হেয়ার বা কয়েল মত পেঁচানো ঝুম সবচেয়ে বেশি টাইট হয় এবং ন্যাচারাল অয়েল এর ঘাটতি থাকায় চুলগুলো বেশি শুষ্ক হয়। এই চুলের যত্নে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তারা সব সময় ময়েশ্চারাইজিং থাকে। কি ধরনের চুলের পরিচর্যায় আপনি সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল গুলো ওয়াশ করতে পারেন। এ ধরনের চুল সপ্তাহে একবার ওয়াশ করা ভালো এবং ময়েশ্চারাইজিং হওয়ার জন্য কয়েক মিনিট চুলগুলো ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
চুলের এই পেঁচানো অবস্থা বজায় রাখতে এবং চুলের স্বাস্থ্য সঠিক রাখার জন্য হাইড্রেশন প্রয়োজন। অতিরিক্ত ময়েশ্চার ধরে রাখতে চুল ধুয়ে ফেলার 20 মিনিট পূর্বে, হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করতে পারেন এবং এজন্য নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ধরনের চুলের যত্নে সুতি বালিশের কভার ব্যবহার করা ভালো, কারণ তা চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সহায়তা করে। এই চুল আঁচড়ানোর জন্য এবং সোজা করতে মোটা দাঁতওয়ালা চিরুনি ব্যবহার করুন শাওয়ার নেয়ার সময়। আপনার চুলের পেঁচানো বাকার অবস্থান ধরে রাখতে চুলগুলো ধৌত করার পর কার্ল ডিফাইনিং ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। বাইরের ধূলোবালি বা ডাস্ট থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন স্টাইলে চুল বাঁধতে পারেন।
কার্লি হেয়ার:
কার্লি হেয়ার সৌন্দর্যের প্রতীক কিন্তু এ ধরনের চুল যত্ন নেয়া বেশ কঠিন। কার্লি হেয়ার এর প্রবণতা হলো এটা ড্রাই হয়ে যেতে চায়। কার্লি হেয়ার সহজে ড্রাই হয়ে যেতে চায়, কারণ চুলের যে একটা ন্যাচারাল অয়েল বা প্রাকৃতিক তেল আছে, তা চুলের গোড়া থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত ট্রাভেল করতে পারে না। এই ন্যাচারাল অয়েল বা প্রাকৃতিক তেল প্রতিরোধ করার জন্য আপনি সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু বা মৃদু সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
এ ধরনের চুল এর ড্যামেজ প্রতিরোধ করার জন্য, সপ্তাহে দুইবার ভালো করে ওয়াস করতে পারেন, এবং এর বেশি ওয়াশ করা ঠিক নয়। চুলগুলো অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে একদিন অল্টারনেটিভ ওয়াশ করতে পারেন কন্ডিশনার দিয়ে। কার্লি হেয়ারের যত্নে ময়েশ্চারাইজার খুবই প্রয়োজন এবং প্রতিবার ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। প্রতিবার না পারলেও অল্টারনেটিভ লি মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিদিনের চুলের যত্নে কার্লি হেয়ার এ বিশেষ নজর দিতে হবে কারণ এ ধরনের চুল ভঙ্গুর হয় যা সহজে ফেটে যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনি গোসল এ কন্ডিশনার ব্যবহারের সময় চুল গুলোতে ভালোভাবে চিরুনি ব্যবহার করেন। চিরুনি ব্যবহারের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চিরুনি এর দাঁতগুলো ফাঁকা ফাঁকা হয়। এই চিরুনি ব্যবহারে আপনার চুলগুলো শুধুমাত্র ফেটে যাওয়া বা ঝরে পড়া থেকেই রক্ষা পাবে না, এর পাশাপাশি চুলগুলো কার্লি থাকতে ও সাহায্য করবে। গোসলের পর চুল গুলো ভালো করে শুকাতে হবে এবং এক্ষেত্রে আপনি ব্লো ড্রাইয়ার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রতিদিনের চুলের যত্নে খাবার:
চুলের স্টাইল করা বা যত্ন নেয়ার পাশাপাশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার খাওয়া জরুরি। চুল ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার হল - ডিম, মাংস, ইয়োগার্ট, স্পিনাস ইত্যাদি।
চুল কেরাটিন নামক স্ট্রাকচারাল প্রোটিন দিয়ে তৈরি, এবং প্রোটিনের ঘাটতি হলে আপনার চুল ঝরে পড়তে পারে ও চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে। চুলের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম খুবই প্রয়োজনীয় কারণ এতে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল। এ ধরনের খাবার চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুল ঝরে পড়া রোধে ও কার্যকর।
প্রবায়টিকস চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে। প্রবায়টিকস সমৃদ্ধ খাবার যেমন ইয়োগার্ট আপনি খেতে পারেন। ইয়োগার্ট এর মধ্যে রয়েছে প্রবায়টিকস সহ ভিটামিন বি ৫ যা চুল পড়া রোধে কাজ করে থাকে।
যদিও রেড মিট এর ক্ষতিকর কিছু দিক রয়েছে তবুও এটার মধ্যে আয়রন রয়েছে যা আমাদের জন্য প্রয়োজন। আয়রনের অভাব ঘটলে মেয়েদের চুল পড়তে পারে তাই আপনার খাবারে রেড মিট যুক্ত করতে পারেন।
প্রতিদিনের চুলের যত্নে কিছু টিপস:
- প্রতিদিন চুল ওয়াশ করা ঠিক নয় কারণ এতে ন্যাচারাল অয়েল বা প্রাকৃতিক তেল বিনষ্ট হয়। ন্যাচারাল অয়েল এর অভাবে আপনার চুল শুষ্ক দেখায়। আপনার scalp যদি তৈলাক্ত হয় তবে আপনার চুল অধিক ঘন ঘন ওয়াস করতে পারেন, যেমন প্রতি সপ্তাহে তিনবার পর্যন্ত।
- চুলের আগা কিছু কেটে ফেলা, চুলকে শুষ্ক হওয়া এবং ডেমেজ থেকে প্রতিরোধ করতে পারে।
- খুব বেশি টাইট করে চুল না বাধাই ভালো।
- অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে চুলকে রক্ষা করতে মাথায় কাপড় ব্যবহার করতে পারেন ।
- চুল ধোয়ার জন্য ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন কারণ গরম পানি আপনার চুলকে ডেমেজ করে দিতে পারে।
কিছু প্রশ্ন:
আমার চুলে কি প্রতিদিন তেল দিতে হবে?
না আপনার চুলে প্রতিদিন তেল দেওয়া প্রয়োজন নেই কারণ অতিরিক্ত তেলের ব্যবহার স্কাল্পে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া আপনার চুল আপনি প্রতিদিন না-ও ওয়াশ করতে পারেন।
চুল ভাল রাখতে আমি কোন খাবার খেতে পারি?
আপনার চুল ভালো রাখতে সবুজ শাকসবজি, ডিম, বাদাম, গাজর, এগুলো খেতে পারেন।
কতদিন পর পর আমি আমার চুল ওয়াস করব?
আপনার চুলের ধরন এর উপর নির্ভর করে সপ্তাহে এক থেকে তিনবার ওয়াশ করা উচিত।
সুস্থ ও সুন্দর চুলের জন্য শুধুমাত্র অল্প কিছু সময় এর জন্য যত্ন নেয়া যথেষ্ট নয়। বরং সুস্থ ও সুন্দর চুলের জন্য প্রতিদিন ও নিয়মিত চুলের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। প্রতিদিনের চুলের যত্নে কি করবেন তা আমরা এতক্ষন আলোচনা করেছি। সুস্থ ও সুন্দর চুলের জন্য ধৈর্য নিয়ে চুলের যত্ন করা উচিত কারণ রাতারাতি এর ফল পাওয়া যায় না। চুলের যত্নে একটি রুটিন তৈরি করে নিন এবং তা মেনে চলুন। তাই নিজের যত্ন নিন ও নিয়মিত চুলের যত্ন নিন।
Post a Comment