ডাস্ট এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়
আমাদের মাঝে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের এলার্জিতে ভুগে থাকি। এদের মধ্যে ডাস্ট মাইট এলার্জি অন্যতম। তাহলে প্রশ্ন জাগে ডাস্ট মাইট এলার্জি কি? কেনই বা ডাস্ট এলার্জি হয় এবং ডাস্ট এলার্জি প্রতিরোধে করণীয় কি?
ডাস্ট এলার্জি কি?
ডাস্ট এলার্জি হলো এক ধরনের এলার্জিক রিএকশন যা ছোট ছোট বাগস দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং এগুলো আমাদের ঘর বাড়ির ধুলোবালিতে অবস্থান করে। আমাদের মাঝে অনেকেই এই ডাস্ট অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন এবং তাদের এলার্জিক রিএকশন হয় ও এলার্জিক উপসর্গ দেখা দেয়। ডাস্ট মাইট গুলো আপনার দেহের মৃত কোষ খেয়ে থাকে এবং এগুলো আপনার আসবাবপত্র কার্পেট বিছানা পত্রের উপরে লুকায়িত অবস্থায় থাকে। আমরা যদি ডাস্ট এলার্জি প্রতিহত না করি তাহলে ডাস্ট এলার্জি দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন এলার্জিক রিএকশন এ আমাদের ভুগতে হবে। এই ধরনের এলার্জি সারা বছর ধরে আপনাকে ভোগাতে পারে যদিও অ্যালার্জেন গুলো চোখে দেখা যায় না।
কিভাবে ডাস্ট মাইট এলার্জি হয় ?
অ্যালার্জি সৃষ্টি অনেকগুলো কারণ রয়েছে এর মধ্যে এনভারনমেন্টাল ফ্যাক্টর বা পরিবেশ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আসলে এমন এক ধরনের এলার্জি যা আমাদের ঘরের ধুলোবালিতে থাকে এবং এটি একটি এলার্জি প্রক্রিয়া। এধরনের এলার্জি হলে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া সহ আরো অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার Asthma এর বিভিন্ন লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে পারে যেমন শ্বাসকষ্ট বুকে চাপ অনুভব করা ইত্যাদি। ডাস্টবিন হলো মাকড়সা মত এক ধরনের অতিক্ষুদ্র পতঙ্গ বা প্রাণী। এরা উষ্ণ এবং আদ্র তাপমাত্রায় বেশি বসবাস করে থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এদের আবাসস্থল হলো আমাদের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বিছানা, কার্পেট, পর্দা, এ সকল জায়গায়।
আমরা যদি আমাদের ঘর বাড়ির ধুলো-ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে পারি, তাহলে ডাস্ট মাইট এলার্জি থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
ডাস্ট এলার্জি হলে যে উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে:
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- নাক মুখ বা গলায় চুলকানি অবস্থা।
- হাঁচি বা কাশি হতে পারে।
- চোখ চুলকাতে পারে এবং চোখ লাল হয়ে যেতে পারে।
- আপনার শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- আপনি বুকে চাপ অনুভব করতে পারেন।
- এলার্জির কারণে আপনার কাশি হতে পারে এবং যার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
- চোখের নিচ দিয়ে ফুলে যেতে পারে।
- নাক দিয়ে পানি পড়া বা সর্দি হতে পারে।
ডাস্ট মাইট এলার্জি কারো কারো ক্ষেত্রে অল্প হতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে গুরুতর অবস্থা ধারণ করতে পারে। অবস্থা গুরুতর হলে উপসর্গ গুলো অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়। দীর্ঘস্থায়ী হলে আপনার ক্রমাগত হাঁচি, কাশি এবং ক্রমান্বয়ে তা Asthma এ রূপ নিতে পারে।
কোন ক্ষেত্রে এ ধরনের এলার্জির ঝুঁকি বাড়বে?
আপনার পরিবারে অন্য কারো যদি এলার্জির হিস্টরি থাকে। আপনার পরিবারের কারো যদি ধুলোবালি বা এলার্জির প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে তাহলে আপনারও ডাস্ট এলার্জি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
বেশি ধুলোবালি যুক্ত এলাকায় গেলে বা ঘর বাড়ির মধ্যে বেশি ধুলো বালি পড়লে এর ঝুঁকি বাড়বে।
শিশু-কিশোরদের এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডাস্ট এলার্জি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
কিভাবে এর চিকিৎসা করা যায়:
এ ধরনের অ্যালার্জির মূল চিকিৎসা-ই হলো ধুলোবালি এড়িয়ে চলবেন যতটা সম্ভব। আপনি যখন ধুলাবালি এড়িয়ে চলবেন তখন এই এলার্জির পরিমাণ আপনার কমে যাবে এবং সেইসাথে এলার্জি গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকবে।
আমরা তো চাইলেও আমাদের আশপাশ থেকে সম্পূর্ণরূপে ধুলোবালি দূর করতে পারবো না। আবার আমাদের মাঝে অনেকে এমন জায়গায় থাকি যেখানে ধুলোবালি এর মাত্রা অত্যাধিক, যেমন - রাস্তার পাশে অথবা কল কারখানার পাশে যাদের বাড়ি। আমরা যেহেতু আমাদের চারপাশ থেকে একবারে ধুলোবালি নির্মূল করতে পারব না, সেহেতু আমাদের চেষ্টা করতে হবে ধুলোবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা যায়। আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলেই ডাস্ট এলার্জি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সে ক্ষেত্রে আমাদের জীবনধারা বা লাইফ স্টাইলে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
ডাস্ট এলার্জি প্রতিরোধে বা কমাতে করণীয়:
আমাদের ব্যবহৃত বিছানার চাদর, বালিশ, এগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। যখন তা ব্যবহার করবেন উপরের আবরণ সরিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
প্রতি সপ্তাহে বিছানার চাদর, কম্বল, বালিশ, এগুলো ধুয়ে ফেলতে হবে, যেন ডাস্ট মাইটগুলো মরে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার বিছানার চাদর, কম্বল, বালিশ, এগুলো গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। ডাস্ট মাইটগুলো মারতে এগুলো কমপক্ষে 15 মিনিটের জন্য গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
আপনার বাসস্থান এর আদ্রতা কম রাখুন। এয়ার কন্ডিশনার আদ্রতা কম রাখতে সহায়তা করে। আপনার বাড়ির আদ্রতা পরিমাপের জন্য আর্দ্রতা পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
এমন বেডকভার বা বালিশের কভার ব্যবহার করুন, যেগুলোতে সহজে ধুলো-ময়লা আটকায় না এবং সহজে যেগুলো পরিষ্কার করা যায়, সেরকম গুলি ব্যবহার করুন।
শিশুদের জন্য এমন খেলনা কিনুন যেগুলো সহজেই ধোয়া যায়। যদি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া যায় সেটা সবচেয়ে ভালো। তাই শিশুদের জন্য বারবার ধোয়া যায় এমন খেলনা ক্রয় করুন।
মেঝের কার্পেটে ধুলো-ময়লা সবচেয়ে বেশি আটকে থাকে। কার্পেট পরিষ্কার করতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক সময় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সম্পূর্ণরূপে মাইট অ্যালার্জেন গুলো দূর করতে পারে না। এজন্য অতি শক্তিশালী ভ্যাকুম ক্লিনার ব্যবহার করা উচিত।
বাড়ির ধুলাবালি পরিষ্কার করার সময় অন্য সদস্যদের দূরে রাখুন, যেন অ্যালার্জেন অন্য সদস্যদের অ্যালার্জি সৃষ্টি না করতে পারে।
ধুলাবালি পরিষ্কার করার জন্য শুকনো কাপড় পরিহার করতে হবে। ধুলাবালি পরিষ্কার এর জন্য ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন, যেন ভেজা কাপড়ের সাথে ধুলোবালি আটকাতে পারে। শুকনো কাপড় ব্যবহার করলে ধুলোবালি গুলো বাতাসের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ধুলাবালি পরিষ্কার করার পর কিছুক্ষণের জন্য ঘরে প্রবেশ করা বন্ধ রাখুন। কিছুক্ষণ পর বাতাসের ধুলোবালি কমে আসলে ঘরে প্রবেশ করুন।
আপনার বেডরুম থেকে বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, এসব কিছু সরিয়ে রাখুন। কারণ এগুলোর মাঝে মাইট এলার্জি জমে থাকতে পারে।
মেঝের কার্পেট, ডাস্ট মাইট দের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করে তাই যতটা সম্ভব কার্পেটিং না ব্যবহার করাই ভালো। মেঝে টাইলস, কাঠ বা ভিনাইল বোর্ড এর হতে পারে, এতে ধুলোবালি সহজে পরিষ্কার করা যায়।
আপনার এয়ারকন্ডিশন এ ভালো মানের ফিল্টার ব্যবহার করুন, এবং প্রতি তিন মাস পর পর অবশ্যই ফিল্টার পরিবর্তন করুন, অথবা ফিল্টার পরিষ্কার করুন।
নিয়মিত ঘরবাড়ি পরিষ্কার করলে, ডাস্ট সাইটগুলি হয়তো একেবারে চলে যাবে না, কিন্তু এটার মাত্রা একেবারেই কমে যাবে। এবং নতুন করে ডাস্ট মাইট সৃষ্টি হবে না, ফলে ডাস্ট মাইট এলার্জি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বাড়িতে স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে থাকলে তা অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে, যেন তা স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে। কারণ এ ধরনের পরিবেশে মাইট এলার্জির লক্ষণগুলো আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।
বাড়িতে আলো বাতাস প্রবেশের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখুন, যেন ভেতরের অংশ স্যাঁতসেতে না হতে পারে। আপনার বসবাসের জায়গাটি যেন উষ্ণ হয় এবং তাতে যাতে সঠিক আদ্রতা বজায় থাকে তা খেয়াল রাখুন।
ঘরবাড়ির ধুলো ময়লা পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন, যেন অ্যালার্জেন গুলো সহজে আপনার ভেতরে প্রবেশ না করতে পারে।
ডাস্ট এলার্জি হলে কখন একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন:
এলার্জির কারণে যদি ক্রমাগত নাক দিয়ে পানি পড়ে, শ্বাসকষ্ট হয়, ঘুমাতে অসুবিধা হয় অথবা হাঁচি হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডাস্ট এলার্জি প্রতিরোধে করণীয় হলো আপনার আবাসস্থল কে ডাস্ট এবং মাইট মুক্ত রাখা। এ জন্য নিয়মিত ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখার কোনো বিকল্প নেই। ডাস্ট মাইট এলার্জি হয়ে যেন অবস্থা আরও গুরুতর না হয় তার পূর্বে সতর্ক হোন। একটু সচেতন হলেই আমরা ডাস্ট এলার্জি প্রতিরোধ করতে পারি।
Post a Comment