-->

বুক জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়

বুক জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়


বুক জ্বালাপোড়া কি?

বুক জ্বালাপোড়া হলো বুকে জ্বালা অনুভব করা অর্থাৎ বুকে যে হার আছে তার ঠিক পেছনে ব্যথা বা জ্বালা অনুভব করা। এই ব্যথা সাধারণত সন্ধ্যা বেলা, খাওয়ার ঠিক পরমুহূর্তেই, এমনকি শোয়ার পরেই অনুভব হয়। আমরা এই প্রবন্ধে বুক জ্বালাপোড়া করার কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।
কদাচিৎ বুক জ্বালাপোড়া করা একটা সাধারন সমস্যা এবং এটা যে কারো হতে পারে। বুক জ্বালাপোড়া করায় যে অস্বস্তিকর অনুভব হয়, তা অনেকেই তার জীবন যাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন করে অথবা অল্পকিছু ওষুধ গ্রহণ করেই দূর করে থাকেন। কিন্তু বুক জ্বালাপোড়া করা যদি খুব ঘনঘন হয় বা অনেক সময় ব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে এটা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

কখন বুক জ্বালা-পোড়া অনুভব করতে পারেন?

অনেকেরই কদাচিৎ বুক জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। কিন্তু এটা যদি প্রতিনিয়ত-ই হয় এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে এটা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ এর সৃষ্টি করতে পারে। এরকম সমস্যা দেখা দিলে খুব দ্রুত একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বুক জ্বালাপোড়া কেমন অনুভব হয়?

বুক জ্বালাপোড়া আসলে এমন এক ধরনের অনুভব যা বুকের মাঝখানে জ্বালা অনুভব হয়। এই জ্বালাপোড়া কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘন্টা ব্যাপী স্থায়ী হতে পারে। আপনি ব্যথা পাবেন যা বসে থাকলে অথবা শুয়ে পড়লেও অনুভব করতে পারেন। আপনি বুকের মাঝখানে ব্যথা তো অনুভব করবেন-ই, এমনকি গলাতেও জ্বালা অনুভব করতে পারেন। আপনি গলাতে এসিডিক, তিতা, গরম, এমনকি লবণাক্ততা অনুভব করতে পারেন। বুক জ্বালাপোড়া করার পাশাপাশি আপনার খাদ্যবস্তু গিলতে অসুবিধা হতে পারে।

কি কারণে বুক জ্বালাপোড়া হয়?

সাধারণ কথা বলা যায় - যখন stomach এর এসিড ব্যাক করে খাদ্যনালীতে চলে আসে, অথবা এসিড সমৃদ্ধ খাবার অন্ননালী তে চলে আসে তখন বুক জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। সাধারণভাবে আমরা যখন কোন কিছু গিলে থাকি তখন খাদ্যবস্তু গুলো অন্ননালী দিয়ে stomach এ যায়। এখানে একটি লক সিস্টেম থাকে যেন খাদ্যবস্তু গিলে ফেলার পর তা আর উপরের দিকে না করতে পারে। খাদ্যবস্তু যাওয়ার সময় এটি কিছুটা প্রসারিত হয় এবং খাবার ভিতরে ঢুকে এরপর তা আবার সংকুচিত হয়ে টাইট হয়ে যায়। যদি কোন কারণে এই স্প্লিন্টার বা লক সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায় তখন stomach এর অ্যাসিড ব্যাক করে অন্ননালী তে চলে আসে এবং তা বুক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। আপনি শুয়ে থাকলে এসিডের এই ব্যাক ফ্লো আরো বাড়তে পারে। এটাই হলো বুক জ্বালাপোড়া করার কারণ।

বুক জ্বালাপোড়া করার ঝুঁকি পূর্ণ ব্যাপার গুলো:

কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু কিছু খাবার বা পানীয় বুক জ্বালাপোড়া করার লক্ষণ কে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এগুলো হলো -
  • অতিরিক্ত ঝাল যুক্ত খাবার
  • পেঁয়াজ অথবা সাইট্রাস সমৃদ্ধ পণ্য গ্রহণ
  • টমেটো বা টমেটো থেকে উৎপাদিত পণ্য যেমন ক্যাচাপ খেলে
  • অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে
  • লাল মরিচ সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে
  • কার্বোনেটেড বেভারেজ, কফি, অ্যালকোহল, এগুলো পান করার ফলে বুক জ্বালাপোড়া করা আরও বাড়তে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজন বুক জ্বালার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে
  • ধূমপান করলে
  • অতিরিক্ত চাপা বা আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করলে।
  • খুব মানসিক চাপ নিয়ে জীবন যাপন করলে।

বুক জ্বালাপোড়ার উপসর্গগুলো:

একটা জ্বালাময় ব্যথা যা বুকে অনুভব হয় এবং সাধারণতা খাওয়ার পর। এমন কি এটা রাতে হতে পারে।
শুয়ে পড়ার পর ব্যথা আরো বেড়ে যেতে পারে।
মুখের মধ্যে তিতা অথবা এসিডিক স্বাদ অনুভব হতে পারে।

কখন আপনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন:

  • মারাত্মক বুকে ব্যথা বা বুকে চাপ অনুভব করলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারণ বুকে ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
  • আপনার যদি গিলতে অসুবিধা হয়।
  • বুক জ্বালাপোড়া করার উপসর্গ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিছুদিনের মধ্যে যদি উপসর্গ না যায়।
  • ক্রমাগত বমি বা বমি ভাব হলে।
  • আপনার ওজন যদি অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যায়।
  • আপনার বুকে অস্বস্তিকর ব্যথা হওয়ার কারনে যদি আপনার জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় বা দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে।

চিকিৎসা পদ্ধতি:

বুক জ্বালাপোড়ার উপসর্গ কমানোর জন্য কি ধরনের ঔষধ খেতে হবে তা জানতে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। বুক জ্বালাপোড়া সাধারণত প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর বা পিপিআই, অ্যান্টাসিড প্রভৃতি দ্বারা চিকিৎসা করা হয়।

কিভাবে বুক জ্বালাপোড়া কমাবেন বা প্রতিকার কি:

জীবনযাত্রা ধারা পরিবর্তন করে আপনি বুক জ্বালাপোড়া কমাতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন করার মাধ্যমে বুক জ্বালাপোড়া করার লক্ষণ কমাতে পারেন। খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এর লক্ষণ দূর করতে।
  • আপনাকে একটি স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখতে হবে কারণ অতিরিক্ত ওজন আপনার পেটে চাপ ফেলে। অতিরিক্ত চাপের ফলে  stomach এর এসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
  • যে সমস্ত খাবার খেলে বুক জ্বালাপোড়া বেড়ে যায় তা পরিহার করতে হবে।
  • খাওয়ার পরে শোয়া যাবেনা বরং কমপক্ষে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করুন শোয়ার জন্য।
  • ঘুমানোর ঠিক কিছুক্ষণ আগে খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। ভরা পেটে ঘুমাতে যাবেন না। খাবার অনেকক্ষণ পর ঘুমোতে গেলে বুক জ্বালাপোড়া করার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
  • খুব টাইট বা আঁটসাঁট পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা আপনার পেটে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও খুব টাইট বেল্ট পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন কারণ অতিরিক্ত টাইট বেল্ট আপনার পেটে অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো পরিহার করে আপনি বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ কমাতে পারেন।
  • শোয়ার সময় মাথায় এবং শরীর সমান্তরালে রাখতে হবে বরং বালিশ কিছুটা উঁচু হওয়া ভালো। অথবা আপনার হাত মাথার নিচে দিন যাতে বুক এবং মাথা আপনার পায়ের দিকের চেয়ে উঁচু থাকে।
  • সারাদিনে অল্প অল্প করে খাবার খেতে হবে এবং একবারে সারাদিনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ হতে বিরত থাকুন। একবারে অনেক বেশি খাবার গ্রহণ না করে অল্প অল্প করে সারাদিন ধরে খাবেন।
  • খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাবেন এবং খুব তাড়াহুড়ো করে খাবার গ্রহণ হতে বিরত থাকুন।
  • নিকোটিন আপনার বুক জ্বালার উপসর্গ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে তাই ধূমপান হতে বিরত থাকুন।
  • বুক জ্বালাপোড়ার ঝুঁকি কমাতে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের জন্য পরিকল্পনা করুন। খাবার পর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করুন এবং তারপর শারীরিক পরিশ্রম অথবা ব্যায়াম শুরু করুন। যদি খাবারের ঠিক কিছুক্ষণ পরেই ব্যায়াম শুরু করেন, তাহলে তা বুকজ্বলার ঝুঁকি কে আরো বাড়িয়ে দিবে। ব্যায়ামের সময় এবং পূর্বে প্রয়োজনীয় পানি পান করে নিন। এটা আপনার পানিশূন্যতা কেও রোধ করবে।
 

যে খাবারগুলো বুক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে:

ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড, পিজা, চিজ, মরিচের গুঁড়া, পটেটো চিপস, প্রসেসড ফুড, টমেটো সস, চকলেট, কার্বোনেটেড বেভারেজ এগুলো হার্টবার্ন বা বুক জ্বালাপোড়া করার লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও কফি কমলা, কমলা জুস, বিভিন্ন ফ্যাটি ফুড ও চর্বিযুক্ত ভাজাপোড়া খাবার বুক জ্বালাপোড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া আরো অনেক খাবার আছে যেগুলো বুক জ্বালাপোড়ার ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

যে খাবারগুলো বুক জ্বালাপোড়া করা প্রতিরোধ করতে পারে:

ওটা মিল, ব্রাউন রাইস, মিষ্টি আলু, গাজর, বাদাম, কলা, তরমুজ, ফুলকপি, শসা, হারবাল চা, বুক জ্বালাপোড়া করা প্রতিরোধ করতে পারে।
 
এই প্রবন্ধে আলোচিত সকল তথ্য শুধুমাত্র ইনফর্মেশন বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে। প্রচলিত অর্থে রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

বুক জ্বালাপোড়ার উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই সতর্ক হোন। দীর্ঘদিন বুক জ্বালাপোড়ার উপসর্গ অব্যাহত থাকলে তা দীর্ঘমেয়াদি রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই বুক জ্বালাপোড়া করার কারণ জানুন ও প্রতিকার করুন।