বায়োটিন এর উপকারিতা - চুল পড়া রোধে কার্যকর
বায়োটিন কি?
বায়োটিন হলো বি ভিটামিন যা সাধারণত চুলের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। বায়োটিন এর অভাবে আপনার চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে। চুল ছাড়াও স্বাস্থ্যে বায়োটিন এর উপকারিতা রয়েছে। আমরা জানবো বায়োটিন এর উপকারিতা কি আর চুল পড়া রোধে এটি কতটা কার্যকর ।
কেউ কেউ এটাও বলে থাকে যে, বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে চুল মোটা হয় এবং চুলের বৃদ্ধি ভালো হয়। বায়োটিন সাধারণত ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় এবং অনেক চুলের পণ্যে বায়োটিন মিশ্রিত থাকে। বায়োটিন মিশ্রিত থাকায় এসব পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু ভালো খবর এই যে, অনেক খাবার এর মধ্যেই বায়োটিন থাকে এবং এই খাবার গ্রহণের ফলে আপনি পর্যাপ্ত বায়োটিন পেতে পারেন। এখানে আমরা বায়োটিন এর উপকারিতা - এটি চুল পড়া রোধে কার্যকর কি না সেটা দেখব।
বায়োটিনের অভাব কাদের হতে পারে?
- যারা প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ডিমের সাদা অংশ খেয়ে থাকেন তাদের বায়োটিনের অভাব হতে পারে। এর কারণ হলো কাঁচা ডিমের মধ্যে Avidin দিন। এ উপাদান থাকার কারণে বায়োটিন শোষিত হয় না।
- যাদের ইনফ্লামেটরি বাওএল ডিজিজ আছে তাদেরও বায়োটিন এর অভাব হতে পারে।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল এর ব্যবহার, সিরোসিস আপনার বায়োটিন এর প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- আবার কিছু কিছু ঔষধ ও বায়োটিন এর ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে যেমন beta-blockers, এন্টি কনভালসেন্ট
- এবং রেটিনয়ডস।
বায়োটিন এর অভাবে কি উপসর্গ দেখা দেয়:
বায়োটিন এর ঘাটতি সাধারণত বিরল। আমাদের অন্ত্রে যে ব্যাকটেরিয়া আছে তারা বায়োটিন তৈরি করে থাকে, এমনকি প্রতিদিনের যে চাহিদা আছে তার থেকেও বেশি তৈরি করে।
বায়োটিন এর অভাব দেখা দিলে বা এর কোন উপসর্গ লক্ষ্য করলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। বায়োটিন এর অভাবে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে-
- চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
- খিঁচুনি হতে পারে
- মতিভ্রম হতে পারে
- নখ ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে
- Rash হতে পারে, বিশেষ করে চোখের চারপাশে নাক এবং মুখে।
বায়োটিন এর খাদ্য উৎস:
অনেক খাবার এর মধ্যেই বায়োটিন রয়েছে। বায়োটিন বিদ্যমান আছে এমন খাবার গুলো হল সিদ্ধ করা ডিমের কুসুম, ওটস, সাদা মাশরুম, চিজ, দুধ, আপেল, টমেটো, গাজর ইত্যাদি।
আমাদের দেহে বায়োটিন এর কার্যকারিতা:
বায়োটিন আমাদের দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট কে ভাঙতে সহায়তা করে। এছাড়াও শরীরের মধ্যে খাদ্য কে শক্তিতে রূপান্তর করতে বায়োটিন ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বায়োটিন আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে, যেমন -
বায়োটিন এনজাইমকে একটিভেট করতে সাহায্য করে যা ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বায়োটিন অ্যামাইনো এসিড কে ভাঙতে সহায়তা করে।
বায়োটিন এর যে উপকারিতা আছে:
চুলের বৃদ্ধিতে বায়োটিনের ভূমিকা:
বেশির ভাগ শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার অয়েল, ক্রিম উৎপাদনকারী কোম্পানি দাবি করে যে তাদের এ সকল পণ্যের মধ্যে বায়োটিন আছে। তারা এটাও বলে থাকে যে বায়োটিন আপনার চুলকে শক্ত ও মজবুত করবে, যা তাদের পণ্যে আছে। তারা এসব উপাদানের মধ্যে বায়োটিন ব্যবহার করে যেন চুল আরও বেশি ঘন হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে চুল পুনরায় গজায়, বিশেষ করে যাদের অ্যালোপেসিয়া বা চুল পড়ার রোগ রয়েছে। গবেষকরা বলেন যে, চুল পুনরায় গজানোর জন্য অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। শুধু বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলেই যে চুল পুনরায় গজাবে ব্যাপারটা এমন নয়। অধিকন্তু আর বলা যায় যে, বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ না করার কারণে যে চুল পাতলা হয়ে যায় এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
আপনার চুল এবং ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিনের ডায়েট বা খাদ্যাভাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার চুলের জন্য অত্যন্ত ভালো :
- ডিম,
- ফ্যাটি ফিশ,
- বাদাম
নখের জন্য ভালো:
পাতলা বা ভঙ্গুর নখ সহজেই ভেঙে যেতে পারে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বায়োটিন এর অভাবে আপনার নখ ভঙ্গুর হতে পারে। বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করায় আপনার নখ শক্ত হতে পারে এবং ভঙ্গুর অবস্থার উন্নতি হতে পারে। আপনি যদি আপনার জীবন যাত্রার ধরন এ পরিবর্তন করেন, এবং আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনেন, তাহলে আপনার নখ সহ আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকতে পারে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বায়োটিন:
গর্ভাবস্থায় বায়োটিন এর পরিমাণ কিছুটা কমে যাওয়া - এটা স্বাভাবিক যদিও এর ঘাটতি জনিত উপসর্গ খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে এর মৃদু ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এই সামান্য ঘাটতি হয়তো কারো কারো কিছুটা ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু এটা তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উপসর্গ সৃষ্টি করে না। তাই গর্ভাবস্থায় বায়োটিন এর ঘাটতি হতে পারে। একজন স্বাভাবিক মহিলার চেয়ে, গর্ভবতী মহিলার বায়োটিনের চাহিদা কিছুটা বেশি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট এর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে বায়োটিন প্রয়োজন কিনা ও কি পরিমান প্রয়োজন তা জানতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডায়াবেটিসে বায়োটিন এর ভূমিকা:
যাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস আছে, বায়োটিন এককভাবে তাদের ব্লাড সুগার লেভেল কে প্রভাবিত করতে পারে না। অন্য উপাদানের সাথে একত্রে ব্লাড সুগার কমানোর কিছু তথ্য পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক গবেষণায় পাওয়া যায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রোগীদের নার্ভ পেইন কমাতে বায়োটিন ভূমিকা রাখে।
ত্বক ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে:
বায়োটিন এর অভাব ঘটলে আপনার ত্বকে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যেমন স্কিন রাশ, ব্রণ, সোরিয়াসিস, ডার্মাটাইটিস ইত্যাদি। বি ভিটামিন গুলি নার্ভ ফাংশনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং হরমোন এর ফাংশন কে প্রভাবিত করতে পারে। তাই আপনার ত্বক ভালো রাখতে বায়োটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে:
বায়োটিন মেটাবলিক ফাংশনে কো-এনজাইম হিসাবে ভূমিকা রাখে যা কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন সহ বিভিন্ন খাবার ভাঙতে সাহায্য করে। আমাদের জন্য ভালো খবর এই যে বিভিন্ন খাবার যেমন ডিমের কুসুম, নাট ইত্যাদি খাদ্যে বায়োটিন পাওয়া যায়।
জন্ম ত্রুটির ঝুঁকি কমায়:
সাধারণ মহিলাদের চেয়ে গর্ভবতী মহিলাদের বায়োটিন এর ঘাটতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যদিও গর্ভাবস্থায় বায়োটিন এর ঘাটতি, প্রেগনেন্সি কে প্রভাবিত করে কিনা, এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় না, তথাপি কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে এর অভাবে জন্ম ত্রুটির ঝুঁকি বাড়তে পারে। সুতরাং গর্ভবতী মহিলাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, বায়োটিন এর যেন কোন অভাব না ঘটে। বায়োটিন এর ঘাটতি প্রতিরোধে কি করনীয় তা একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
বায়োটিন এর সম্ভাব্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া:
বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট আপনার সমস্যা সৃষ্টি করবে, যদি আপনি তা মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করেন। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে স্কিন রাশ, ইনসুলিন এর সমস্যা, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি।
বায়োটিন গ্রহণের মাত্রা:
প্রতিদিন খাবারের সাথে কি পরিমান বায়োটিন গ্রহণ করতে হবে, তা এফডিএ দ্বারা নির্ধারিত নয়। প্রতিদিন কি পরিমাণ বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে, এবং তা কত দিন ব্যাপী খেতে হবে, তা জানার জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আসলে চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় বায়োটিনের সবচেয়ে ভূমিকা বেশি রয়েছে। যদিও আমাদের শরীরে বায়োটিনের আরো অনেক কার্যকারিতা আছে। চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার জন্য অথবা চুল পড়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে, যেমন ইমোশনাল ও ফিজিক্যাল আঘাত, অ্যালোপেসিয়া ও কিছু কিছু ঔষধ দায়ী। বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট যে আপনার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ, এর জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই চুল কেন পড়ে যাচ্ছে তা শনাক্ত করে এর চিকিৎসা করায় চুল পড়া প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এটা সত্য যে আপনার চুল কেমন হবে, তা নির্ভর করে আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং কি পরিমাণ পুষ্টি আপনি গ্রহণ করছেন তার উপর, যদিও বায়োটিন এর উপকারিতা রয়েছে।
Post a Comment